৫০ টাকা বাড়িয়ে দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ হওয়ায় আনন্দ-উল্লাস করেছেন হবিগঞ্জের চা শ্রমিকরা। তারা মিষ্টিও বিতরণ করেছেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর।
রোববার সকাল থেকেই হবিগঞ্জের ২৪টি বাগানে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অনেক শ্রমিক কাজে যোগ দেননি।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর এখন বাগানে বাগানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল।
দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চান্দুপুর চা বাগানের এই শ্রমিক বলেন, “রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়নি। সোমবার সকাল থেকেই তারা রুটিন অনুযায়ী কাজে যোগ দিবে। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই।”
আন্দোলনের ১৯তম দিনে শনিবার বিকালে চা বাগান মালিক পক্ষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর নতুন এই মজুরির ঘোষণা আসে। রোববার সকাল থেকে চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেওয়ার জন্য বাগানের সেকশনে সেকশনে ভিড় করেন।
চুনারুঘাট উপজেলায় বেশ কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, নাচ-গানের পাশাপাশি আনন্দ শোভাযাত্রা করেন শ্রমিকরা। ঢোলের তালে তালে নিজস্ব সংস্কৃতির নাচ প্রদর্শন করেন শ্রমিকরা।
এ ছাড়া অনেক শ্রমিককে প্রতীকী নৌকা নিয়ে সরকারের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মা’ সম্বোধন করেও স্লোগান দেন।
সেকশনে আসা চান্দপুর চা বাগানের শ্রমিক অঞ্জলি বাউরি ও সন্ধ্যা বাগতির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এই মজুরিতেও তাদের চলতে কষ্ট হবে। কিন্তু আন্দোলন চালিয়ে গেলেও তো মজুরি মিলবে না। ফলে তারা সোমবার থেকে কাজে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাই রাখছেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক নারী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সন্ধ্যা রানী ভৌমিক বলেন, “আমাদের দাবি ছিল ৩০০ টাকা মজুরি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন আমরা তাতেই খুশি। আমরা আনন্দ নিয়ে সোমবার থেকে কাজে ফিরে যাব।”
চান্দপুর চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সাধন সাঁওতাল বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে রোববারের দিনটি কাটাব। সারা দিন প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের প্রতীক নৌকা নিয়ে আনন্দ মিছিল করব। মিষ্টি বিতরণ করব। নাচ-গান করব আর প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রার্থনা করব। উনি যাতে সব সময় ভালো থাকেন।”
দুপুরে চান্দপুর চা বাগানে আসেন চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক। এ সময় তিনি শ্রমিকদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন।
সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের মজুরি ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করায় শ্রমিকরা আনন্দ-উল্লাস করছেন শুনেই আমি আর অফিসে থাকতে পারলাম না। আমি শ্রমিকদের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করতেই তাদের কাছাকাছি চলে এসেছি।
মজুরি বাড়ানোর পর প্রধানমন্ত্রী রোববার থেকে শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন এবং শিগগির শ্রমিকদের আগ্রহ অনুযায়ী তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।
বৈঠক শেষে শনিবার সন্ধ্যায় তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে বাড়তি চা পাতা তোলা, উৎসব বোনাসসহ শ্রমিকদের আনুপাতিক হারে অন্যান্য ভাতা ও সুবিধা বাড়ানোর বিষয়েও সম্মতি দিয়েছেন চা বাগান মালিকরা।
বৈঠকে ১৩টি চা বাগানের মালিক উপস্থিত ছিলেন।
