Loading...
The Financial Express

যে চারটি ‘হ্যাপি হরমোন’ ভালো মন্দ অনুভূতি জাগায়

| Updated: September 01, 2022 11:46:34


যে চারটি ‘হ্যাপি হরমোন’ ভালো মন্দ অনুভূতি জাগায়

হরমোনকে বলা হয় ‘রাসায়নিক বার্তাবাহক’। এরা বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এবং শরীরের নানাপ্রকার বিপাকীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের মতো উদ্ভিদের শরীরেও নানাপ্রকার হরমোন নিঃসরণ হয়। 

মানবশরীরের অনেকগুলো হরমোনের মধ্যে চারটি মৌলিক হরমোন ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন অনুভূতি, মেজাজ, ভালোলাগা-মন্দ লাগা নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষজ্ঞগণ এদের নাম দিয়েছেন ‘হ্যাপি হরমোন’। শরীরে এদের মাত্রা বেড়ে গেলে আমরা হাসি-খুশি এবং প্রাণবন্ত থাকি। কমে গেলে এর উল্টোটা ঘটে। খাবার-দাবারের পাশাপাশি কিছু অভ্যাস আমাদের শরীরে হ্যাপি হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। 

প্রেম ও প্রশংসা শরীরে ডোপামিন বাড়িয়ে দেয় 

ডোপামিন হরমোনকে বলা হয় ‘গুড ফিলিং' হরমোন। ডোপামিন অনেকাংশে আমাদের ভালোলাগা নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষ প্রেমে পড়লে, প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটালে, কোনো চ্যালেঞ্জ পূর্ণ করলে, অভিনন্দন বার্তা পেলে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে সরাসরি ডোপামিন নিঃসরণ হওয়া শুরু হয়। 

বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ডোপামিনে মোট ২০০ প্রকার রিসেপ্টর জিন থাকে। এরা মস্তিষ্কে যৌনতৃপ্তি বোধ করাতে ভূমিকা রাখে। ডোপামিন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং তাৎক্ষণিক মেজাজ ভালো করে দেয়। 

পুষ্টিকর খাবার ও শরীরচর্চার পাশাপাশি নিজের প্রতি যত্নবান হলে, কাজ বা চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়ে শেষ করলে, লক্ষ্য অর্জন করলে, নিজের জয় উদযাপন করলে শরীরে ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। মন ভালো করতে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন কোকোয়া সিড থেকে তৈরি ডার্ক চকলেট খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। 

বিপাকীয় নিয়ন্ত্রণ সেরোটোনিনের হাতে

মানব শরীরের বিপাকীয় কার্যাদি, মেজাজ, আহার-নিদ্রা, ক্ষুধা, মনে রাখা ইত্যাদি কার্যাবলি সেরোটোনিনের দ্বারা প্রভাবিত হয়। সেরোটোনিন টেনশন বা দুশ্চিন্তা কমাতেও ভূমিকা রাখে। সেরোটোনিনের ভারসাম্য নষ্ট হলে সুস্থ যৌন জীবন ব্যাহত হয়। কয়েকটি গবেষণায় জানা গেছে, পুরুষের শরীরে সেরোটোনিনের মাত্রা কমে গেলে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা প্রিমাচিউর ইজাকুলেশান সমস্যাটি দেখা দেয়। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যিনি যত প্রকৃতির কাছাকাছি থাকবেন তার শরীরে তত বেশি সেরোটোনিন উৎপন্ন হবে। সকালবেলায় রৌদ্রস্নান, জগিং বা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, সাঁতার বা সাইকেলিং এবং যোগব্যায়ামের অভ্যাস করলে শরীরে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি পালংশাক, লেটুস, বিট, গাজর, বিভিন্নপ্রকার বাদাম শরীরে সেরেটোনিনের মাত্রা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। 

অক্সিটোসিনের ডাকনাম ‘লাভ হরমোন’

অক্সিটোসিন আমাদের মনে প্রেমানুভূতি, ভালোবাসা এবং বন্ধন তৈরি করে। আমাদের প্রিয় মানুষগুলোর সাথে বন্ধন তৈরি করে দেয় হরমোনটি। পোষা প্রাণীর প্রতি যে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয় সেটির জন্যেও অক্সিটোসিন দায়ী। সম্পর্কের গভীরতা নির্ধারণে অক্সিটোসিন সরাসরি ভূমিকা রাখে। কার উপর ভরসা করা যাবে কার উপর যাবে না সেটি ঠিক করে দেয় অক্সিটোসিন হরমোন।

প্রিয়জনের হাত ধরে হাঁটলে, প্রিয়জনকে চুম্বন করলে, পরিবারের সাথে সময় কাটালে, বন্ধু-বান্ধবের সাথে গল্প-আড্ডায় মাতলে, পোষা প্রাণীর সাথে সময় কাটালে শরীরে অক্সিটোসিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। 

এন্ডোরফিনকে বলা হয় ‘পেইন কিলার হরমোন’

এন্ডোরফিন হরমোন শারীরিক এবং মানসিক ব্যাথা উপশম করে। কেউ যখন শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয় তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার শরীরে এন্ডোরফিন হরমোন সক্রিয় হয়। ফলে ব্যক্তি সেই আঘাত থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে। শরীরে এন্ডোরফিনের ভারসাম্য নষ্ট হলে ব্যক্তির কোনো শারীরিক বা মানসিক আঘাত থেকে বের হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এন্ডোরফিন পরোক্ষভাবে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।

শরীরে এন্ডোরফিন হরমোন বাড়ানোর একটাই উপায় – প্রাণ খুলে হাসা। প্রাণ খুলে হাসলেই এন্ডোরফিনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। জোকস এবং রম্য সাহিত্য পড়লে, জীবনে ঘটে যাওয়া মজার ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবলে, প্রাণ খুলে আড্ডা দিলে এন্ডোরফিনের মাত্রা বাড়ে। একটি প্রবাদ আছে, হাসলে আয়ু বাড়ে। হাসির ফলে শরীরের হরমোনাল ভারসাম্য সুস্থিত হয় জন্যেই জীবনকাল বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার এবং শরীরচর্চা করা দরকার। 

মেহেদি হাসান বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

mahedi.bcpsc.2016@gmail.com

Share if you like

Filter By Topic