Loading...
The Financial Express

দুনিয়া কাঁপানো সব আর্কেড গেমস!

| Updated: August 30, 2022 18:36:01


দুনিয়া কাঁপানো সব আর্কেড গেমস!

বিশ্বজুড়ে ভিডিও গেমসের শুরুটা ছিল আর্কেড গেমসেই। এক সময় বাংলাদেশের অলিগলিতে পাওয়া যেত এইসব গেমের দোকান। কয়েন দিয়ে বা টাকা দিয়ে খেলতে হতো এইসব গেমস। ব্যক্তিগত কম্পিউটারের বহুল পরিচিতির আগে গেমের দোকানে গিয়ে আর্কেড গেমস খেলাই শিশু-কিশোরদের বিনোদনের এক অন্যতম উৎস ছিল। 

পিক্সেলেটেড স্ক্রিনে আলো-আঁধারির মাঝে রঙ-বেরঙের অনেক আর্কেড গেমসই হয়েছে জনপ্রিয়, হয়েছে ব্যবসাসফল। সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে অত্যন্ত লাভবান হওয়া এমনই বেশ কিছু আর্কেড গেমসকে মনে রেখেছে আর্কেডপ্রেমীরা।

স্পেস ইনভেডার

সত্তরের দশকের শেষভাগে আর্কেড গেমস ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এমনই সময়ে ১৯৭৮ সালে, জাপানে প্রথমবারের মতো তৈরি করা হলো স্পেস ইনভেডার গেমটি।

খেলার নিয়ম খুবই সহজ। স্ক্রিনে সারি সারি অ্যালিয়েন বা রোবট সদৃশ বস্তু নেমে আসবে নিচের দিকে, সেগুলোকে পৌঁছানোর আগেই গুলি করতে হবে নিজের স্পেসশিপ দিয়ে। সব শত্রু মেরে ফেললেই গেমসের সমাপ্তি।

স্পেস ইনভেডারস (ছবি: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন)

এই সামান্য গেমটিই হয়ে গিয়েছিল এক বছরের মধ্যে জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় গেম। ১৯৮২ এর আগেই গেমটি আয় করে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি যা বর্তমান সময়ে এসে সাড়ে সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়াবে। 

মারিও ব্রোস

সুপার মারিও বা মারিও কার্টুন চরিত্র হিসেবেই জনপ্রিয় ছিল আশির দশকে। ১৯৮৫-এর দিকে মারিও প্রথমবারের মতো উঠে আসে ভিডিও গেমস হিসেবে। একবার আর্কেড গেমসের খাতায় নাম ওঠার পর মারিওকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। যেকোনো ধরনের ভিডিও গেম হিসেবে প্রথমবারের মতো দুই মিলিয়ন মারিও গেমসের মেশিন বিক্রি হয় সারা পৃথিবী জুড়ে। পরে অন্যান্য অনেক গেমসের উত্থান হলেও মারিওর আবেদন কমেনি ভক্তদের কাছে।

মারিও ব্রোসের মারিও (ছবিএইস অ্যামিউজমেন্ট)

শুধু মানুষের ভালোবাসাই নয়, বরং আর্থিক দিক বিবেচনাতেও মারিও দারুণ সফল। মারিওর বিভিন্ন সংস্করণ মিলিয়ে এদের আয় প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে শুধু সুপার মারিওই আয় করেছে প্রায় ১৫.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

মর্টাল কমব্যাট

বর্তমানে সহিংস ভিডিও গেমের তালিকায় বেশ পরিচিত মুখ মর্টাল কমব্যাটের শুরুটা কিন্তু ছিল আর্কেড গেমসেই। মর্টাল কমব্যাট সিরিজের দ্বিতীয় গেম মর্টাল কমব্যাট টু এর হাত ধরে গেমটি পায় অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা। প্রথম মর্টাল কমব্যাট গেমের এক বছর পর এটি মুক্তি পায় এবং সেখানে গ্রাফিক্সের বেশ কিছু উন্নতির পাশাপাশি যুক্ত হয় নতুন ৫ টি চরিত্র।

মর্টাল কমব্যাট টু (ছবিইউ এস গেমারস)

মর্টাল কমব্যাটের আয়ের খাতা বেশ উজ্জ্বল। ২০০২ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘরে তোলে গেমটি। এর পাশাপাশি এই গেমের সাউন্ডট্র্যাকও পেয়েছিল সবচেয়ে সফল ভিডিও গেমসের সাউন্ডট্র্যাকের খেতাব। এতো বছর পরেও এখনো বেশ দাপটের সাথেই এগিয়ে চলছে মর্টাল কমব্যাট।

অ্যাস্টেরয়েড

স্পেস শুটার গেমের তালিকায় আরেক ঝলমলে নাম অ্যাস্টেরয়েড। গেমের মূল ধারণাটা প্রায় একই। কিন্তু নতুনত্ব ছিল খেলার কৌশলে। আগের মতো শুধু উপর থেকে না হয়ে সবদিক থেকেই আসতো আক্রমণ। এছাড়া গ্রাফিক্সের বেশ কিছু পরিবর্তন স্পেশ শুটারের চেয়ে অ্যাস্টেরয়েডকেই বেশি জনপ্রিয় করে তোলে। অ্যাস্টেরয়েডের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর নজরকাড়া হার্ডওয়ার।

স্পেস শুটিং গেমে বৈচিত্র‍্য আনা অ্যাস্টেরয়েড (ছবি: স্ক্রিনর‍্যান্ট)

বর্তমানের সাথে যদি সমতায় আনতে হয়, সেক্ষেত্রে ১৯৭৯ সালে মুক্তি পাওয়া অ্যাস্টেরয়েড গেমটির আয় গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এমনকি সেই আশির দশকেই এদের আয় ছিল প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

ক্যাডিলাকস অ্যান্ড ডাইনোসর

একটু শক্তপোক্ত নামের এই গেমটি আমাদের কাছে অধিক পরিচিত মুস্তাফা নামে। মুস্তাফা বা ক্যাডিলাকস অ্যান্ড ডাইনোসর - যে নামেই ডাকা হোক না কেন, ১৯৯৩ এ মুক্তি পাওয়া এই আর্কেড গেমসটির জনপ্রিয়তার কমতি হবে না কিছুতেই। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ২০০০ এর পরেও প্রায় এক যুগ ধরে দাপটের সাথে রাজত্ব করেছে গেমটি।

ক্যাডিলাকস অ্যান্ড ডাইনোসর (ছবি:আলফা কোডারস)

জেনোজোয়িক টেলস নামের কমিক বই থেকেই নেয়া হয়েছে ভবিষ্যতের পৃথিবীকে কেন্দ্র করে তৈরি এই গেম। একসাথে খেলা যেতো তিনজন এবং সব মিলিয়ে প্রায় ৮ ধাপে খেলতে হতো গেমটি। পরবর্তীতে এই গেমটির আরেকটি সংস্করণ তৈরি হলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি।

প্যাকম্যান

প্যাকম্যান গেম খেলেনি বা এর নাম শোনেনি অথচ ভিডিও গেমের সাথে পরিচিত - এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। বিশ্বজুড়ে চার লক্ষেরও বেশি কেবিনেট বিক্রি হওয়া এই গেম আর্কেড গেমসের তালিকায় সর্বকালের সেরাগুলোর একটি। প্যাকম্যানের মূল সংস্করণের বাইরে মিস প্যাকম্যান নামের আরেকটি সংস্করণ পাওয়া যেত যেটিও কম জনপ্রিয় নয়।

প্যাকম্যানের স্ক্রিন (ছবিগেডপ্রো)

প্যাকম্যানের শুরুটা আশির দশকেই। সবদিকে তখন স্পেশ শুটার ,স্ট্রিট ফাইটার বা মর্টাল কমব্যাটের মতো গেম জনপ্রিয়তার তালিকায় থাকছে। এরই মধ্যে কোনো প্রকার সহিংসতা ছাড়াই নতুন এক আমেজ এনে দিল গোলকধাঁধার মধ্যে ঘুরে বেড়ানো মজার চরিত্রদের নিয়ে গেম প্যাকম্যান। ১৯৯০ এর আগ পর্যন্ত এদের আয় ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বর্তমানের সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।

সিরাজুল আরিফিন বর্তমানে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

sherajularifin@iut-dhaka.edu

Share if you like

Filter By Topic