ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
তিন বছর পর তার এ দ্বিপক্ষীয় সফরে বাণিজ্য, জ্বালানি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সহযোগিতার পাশাপাশি দুই দেশের অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো আলোচ্যসূচিতে প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট সোমবার সকাল সোয়া ১০টার পর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
ফ্লাইটটি বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় নয়া দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকবেন ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ এবং ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুহাম্মদ ইমরান।
বিমানবন্দরে শেখ হাসিনার জন্য থাকবে লাল গালিচা, একটি সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে জানানো হবে অভ্যর্থনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং উপ-রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সঙ্কটের এই কালে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
এর বাইরে ব্যবসায়ীদের এক অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন ভারতের শীর্ষ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি।
এই সফর নিয়ে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ গুরুত্ব পাবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায়।
“বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক গভীরতর হওয়াসহ সার্বিকভাবে এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ গৃহীত হবে।
“এই সফর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ও বিদ্যমান গতিশীল সম্পর্ককে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা যায়।”
সফর সূচি
সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসবেন জয়শঙ্কর। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী যাবেন নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগায়।
সেখান থেকে ফেরার পর বৈঠক করবেন আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির সঙ্গে। পরে রাতে বাংলাদেশ হাই কমিশনে হাই কমিশনারের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালেই ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে শেখ হাসিনা গান স্যালুট গ্রহণ করবেন এবং আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার পরিদর্শন করবেন।
এরপর রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেখ হাসিনা যাবেন হায়দ্রাবাদ হাউজে। সেখানে মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন তিনি। তারা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন।
এরপর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। কর্মসূচি শেষে সেখানে মোদীর দেওয়া মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
সেদিনই বিকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার সকালে ভারতের উন্নয়নমন্ত্রী কিষাণ রেড্ডি দেখা করবেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। এরপর বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়ী ফোরামের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্টুডেন্ট স্কলারশিপ’ প্রধান অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
ঢাকা ফেরার আগে বৃহস্পতিবার বিমানে জয়পুর যাবেন শেখ হাসিনা; সেখান থেকে যাবেন আজমির শরিফ জিয়ারত করবেন।
