Loading...
The Financial Express

কোটার্ড সিনড্রোম: নিজেকে মৃত ভাবার অদ্ভূত এক অসুখ

| Updated: September 25, 2022 15:12:39


কোটার্ড সিনড্রোম: নিজেকে মৃত ভাবার অদ্ভূত এক অসুখ

৬৫ বছর বয়সী এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। যার রয়েছে গত ৩০ বছর যাবত নিয়মিত ধূমপানের অভ্যাস এবং বছরখানেক যাবত কিছুটা মানসিক অসুস্থতা। তবে তার পরিবারে কখনো কারো কোনো মানসিক সমস্যা ছিল না। একসময় তাকে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। 

চিকিৎসকের সাথে কথোপকথনে বেরিয়ে এলো অদ্ভুত কিছু তথ্য। সেই স্কুল শিক্ষক নিজেকে একজন মৃত মানুষ বলে দাবী করেন কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে তিনি মারা গেছেন। এই বিশ্বাস থেকে তিনি বেশকিছুদিন যাবত খাওয়াদাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিলেন। তার ভাষ্যমতে তিনি মারা যাওয়ার আগে তার বেশকিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং তার মাথা কাজ করত না। কথাগুলোকে অসংলগ্ন বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে। 

সেই শিক্ষকের প্রকৃতপক্ষে কী হয়েছিল তা সম্পর্কে আলোকপাত করার আগে চিকিৎসকরা তাকে পর্যবেক্ষণ করে ও মেডিক্যাল হিস্টোরি ঘেঁটে যা পেয়েছিলেন তার সারমর্ম অনেকটা এরকম - তিনি হাইপারটেনশন, অপুষ্টি, নিউরোপ্যাথি, হাইপারট্রফি, হার্ট ডিজিজ ও কানের সংক্রমণে ভুগছিলেন। তার মানসিক স্বাস্থ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তিনি বিষণ্ণতায় ভুগতেন, দুঃখী ও হতাশ ছিলেন এবং ডিল্যুশনে ভুগতেন। 

বেঁচে থাকা সত্ত্বেও নিজেকে মৃত ভাবার এই অদ্ভুত ও বিরল অসুখের নাম হচ্ছে কোটার্ড সিনড্রোম। এই অসুখে আক্রান্ত মানুষ নিজেকে মৃত ভাবে বা মারা যাচ্ছে এরকম ধারণা করে বা শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে গেছে এরকম মনে করে। 

এই অসুখ এতো বিরল যে এ পর্যন্ত বিশ্বে মোট ২০০ টি ঘটনা বা আক্রান্ত ব্যক্তির কথা জানা গেছে। 

কোটার্ড সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে যা ব্রেইন ও স্মৃতিশক্তির সাথে সম্পর্কিত। 

ডিমেনশিয়া (স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া), এনসেফালোপ্যাথি(ব্রেইনে ভাইরাসের সংক্রমণ হলে), এপিলেপ্সি(মৃগীরোগ), মাইগ্রেন, স্ক্লেরোসিস(ব্রেইন ও স্পাইনাল কর্ড অসাড় হয়ে যাওয়া) বা পারকিনসন’স ডিজিজ(ব্রেইনের নার্ভ সেলগুলো নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে, শরীর কাঁপে, কথা জড়িয়ে যায়) থেকে কোটার্ড সিনড্রোম হয়। 

ব্রেইন স্ট্রোক করলে বা কোনো আঘাতের ফলে ব্রেইনের বাইরের দিকে রক্তক্ষরণ হলে যেটাকে সাবড্যুরাল ব্লিডিং বলে।

কারণ জানার পর প্রথমেই যে প্রশ্নটা আসে, “কাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি?” 

বিশেষত যাদের বয়স ৫০ এর কাছাকাছি, পূর্বে কোনো ধরনের মানসিক অসুস্থতা ছিল, অবসাদে ভুগছে, সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত, ব্রেইনে টিউমার রয়েছে, স্ট্রোক করেছে বা ব্রেইনে রক্তজমাট বেঁধেছে বা আঘাত পেয়েছে এবং ছোটবেলায় বাইপোলার ডিজঅর্ডার ছিল-এমন মানুষদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।  

যে লক্ষণগুলো দেখলে কোনো রকম বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত তার মধ্যে রয়েছে-

চিন্তা-চেতনার বিলোপ ঘটা।

গর্ভধারণে অস্বীকৃতি জানানো।

“আমার শরীরে তো ‘অমুক’ বা ‘ঐ অঙ্গগুলো’ আর নেই”-এমন ধরনের কথা বললে।

“আমি তো মরে গিয়েছি”-এমন কথা বারবার বলা বা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করলে।

অকারণে একদম খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিলে।

একদম এক ঘরে কোণঠাসা হয়ে পড়ে থাকলে।

সামাজিকতা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললে।

বেঁচে থাকার কোনো অর্থ খুঁজে না পেলে। 

কোটার্ড সিনড্রোম কিন্তু কোনো ‘রোগ’ নয়, এটি একটি ‘সিনড্রোম’। এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঔষধের পাশাপাশি কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি বা সাইকোথেরাপি দেয়া হয়। তবে এইগুলোতে কাজ না হলে ইলেক্ট্রো কনভালসিভ থেরাপি দেয়া হয়। 

লক্ষণগুলো জটিল হলেও সঠিক চিকিৎসা পেলে বেশিরভাগ রোগীই পুরোপুরি সুস্থ না হলেও অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠে। 

শবনম জাবীন চৌধুরী ইউনিভার্সিটি  অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।

zabin860@gmail.com

Share if you like

Filter By Topic