Loading...
The Financial Express

ইতিহাসের কিছু উড়োজাহাজের রহস্যময় অন্তর্ধান যেভাবে

| Updated: September 25, 2022 13:52:51


মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বিমান। ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বিমান। ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে ২৩৯ জন যাত্রী ও ক্রু সহ অপেক্ষা করছে একটি বিমান। বিমানটি চালনার দায়িত্বে আছেন জাহারে আহমাদ শাহ ও তার কো পাইলট ফারিক হামিদ। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্য বেইজিং এর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিবেন তারা।

তবে এটিই যে হবে তাদের শেষ বিমান যাত্রা, সেটি কী একবারের জন্যও তারা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন? বোধ হয় না। হয়তো-বা আন্দাজ করতে পারেননি বিমানে থাকা যাত্রী ও ক্রু সদস্যরাও।  

বলছিলাম মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ ৩৭০ নামক বিমানটির কথা। যার অন্তর্ধান আজও পৃথিবীর গভীরতম অমীমাংসিত রহস্যগুলোর মধ্যে একটি।

২০১৪ সালের ৯ মার্চ দিবাগত রাতে বেইজিং এর উদ্দেশ্যে উড়ে যায় বোয়িং ৭৭৭ বিমানটি। কিন্তু উড়ানের ঠিক এক ঘন্টা পরেই কন্ট্রোল অফিসের সাথে বিমানটির সমস্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বলতে গেলে কোনো সূত্র পিছনে না রেখেই শূন্যে মিলিয়ে যায় বিমানটি।

এমএইচ ৩৭০ হারানোর ৮ বছর পূরণ হয়ে গেলেও বিমানটি কোথায়, কেন, কীভাবে ও কী কারণে হারিয়ে গেছে তার কোন হদিস খুঁজে পায়নি পৃথিবীর তাবড় অনুসন্ধান সংস্থাগুলো।

বিমানটির ছিল না কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি, ছিল না পাইলটদের কর্মদক্ষতা ও দায়িত্বজ্ঞান এর অভাব। সংযোগ বিচ্ছিন্নের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আসেনি কোনো বিপদ সংকেতের আভাস। তবুও কেন এভাবে হারিয়ে যাবে বিমানটি? উত্তরটি আজও অজানা।

নিখোঁজ বিমানটি খোঁজার জন্য ১২টিরও বেশি দেশ সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালায়। মালাস্কা প্রণালী ও চীন সাগরজুড়ে তল্লাশি চালানো হয়। খোঁজ চালানো হয় ২৭ হাজার বর্গ নটিক্যাল মাইল এলাকা জুড়ে। তবে ফলাফল হয় শূন্য।

সাধারণত একটি বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হলে সেটির ধ্বংসাবশেষ, যাত্রীদের মরদেহ ইত্যাদি উদ্ধার করা যায়। কিন্তু এসব তো দূরের কথা রহস্যময় এ বিমানের ব্ল্যাকবক্সটি পর্যন্ত খুঁজে পায়নি অনুসন্ধানরত টিম। 

টানা তিন বছর অনুসন্ধানের পর ২০১৭ সালে এসে বিমানটি খোঁজার সমস্ত প্রচেষ্টা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমএইচ ৩৭০ এখন শুধু একটি নাম যা স্মৃতি হয়ে গেঁথে রয়েছে প্রিয় মানুষ হারানো স্বজনদের মনে।

তবে উড়োজাহাজ হারিয়ে যাওয়ার এমন ঘটনা কিন্তু নতুন নয়। এমএইচ ৩৭০ এর পূর্বে এমন বহু ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ইতিহাস। ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের ৫ তারিখ এমনই একটি ঘটনার সূত্রপাত হয়।

সেদিন একটি নয় বরং ছয়টি বিমান একই দিনে শূন্যে মিলিয়ে যায়। যার রহস্য আজ পর্যন্ত অজানাই থেকে গেছে।

অন্যান্য দিনের মতো ইউএস ন্যাভাল এয়ার স্টেশান থেকে ৫টি গ্রুম্যান এভেঞ্জার আকাশে উড়ে। উদ্দেশ্য বোমাবর্ষণ এর মহড়া দেওয়া। প্রশিক্ষণের জন্য ফ্লাইট - ১৯ এর সাথে ৪টি অ্যাভেঞ্জার রওনা দেয় যার দায়িত্বে ছিলেন ইউএস নেভি লেফটেন্যান্ট চার্লস ক্যারল টেইলর।

ফ্লাইট - ১৯ এর পরিকল্পনা ছিল প্রশিক্ষণের জন্য হেন্স অ্যান্ড চিকেন নামক জায়গায় গিয়ে বোমা ফেলবে। সেখান থেকে বাহামা দ্বীপপুঞ্জের কাছে যাওয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ঘুরে আবার ফ্লোরিডায় ফিরে আসা।

সেদিন বরাবরের মতোই টেইলর প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে হেন্স এন্ড চিকেনে পৌছে যান এবং বেলা আড়াইটা নাগাদ বোমা বর্ষণের মহড়া শেষ করেন।

সে পর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলেও উত্তরে ঘোরার পরেই সকল অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হতে শুরু করেন তিনি। হঠাৎ করেই একসাথে ৫টি বিমানের কম্পাস একসাথে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এ সম্পর্কে ফোর্ড লাউডারডালের কন্ট্রোল রুমে বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। শেষ রক্ষা হয়নি চার্লস ও তার সঙ্গীদের।

টেইলর ও তার সাথের ১৩ সঙ্গী সেদিন আর ফিরে আসেননি। এমনকি ফিরে আসেনি তাদেরকে খুঁজতে যাওয়া পিবিএম-৫ মডেলের বিমানটিও। নিখোঁজ কোনো বিমানকে খুঁজতে গিয়ে ১৩ জন যাত্রী নিয়ে স্বয়ং নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, এ যেন কোনো ভৌতিক ঘটনাকেও হার মানায়।      

পরদিন ৩০০ জাহাজ ও বিমান একযোগে নিখোঁজ বিমানগুলোকে খুঁজতে বের হয়। ৫ দিনে ৩ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু সবাইকে হতাশ ও হতবাক করে দিয়ে বিমানগুলোর কোন হদিস না নিয়েই তারা ফিরে আসে।   

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল কে মৃত্যুফাঁদ হিসেবেই চেনে মানুষ। এটি নিজেই একটি অমীমাংসিত রহস্যের নাম। পৃথিবীর অনেক জাহাজ ও উড়োজাহাজ এর অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে।

সেই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের উপর দিয়ে যাওয়াটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে টাইলর সহ বাকিদের জীবনে, এমনটা অনেকে সন্দেহ করেন। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে নতুন কোনো তত্ত্ব বা প্রযুক্তির কল্যানে ফ্লাইট ১৯ এর অন্তর্ধানের জটিল রহস্য ভেদ করা সম্ভব হবে।

এবার পাড়ি জমানো যাক আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে বিমান চালিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রথম নারী বিমানচালক এর জীবনে। যার নাম ছিলো অ্যামেলিয়া এয়ারহার্ট।

অ্যামেলিয়া এয়ারহার্ট ছিলেন একজন মার্কিন বিমানচালক ও লেখিকা। বিমানচালনার ক্ষেত্রে নারীদের জন্য তিনি অগ্রদূত হয়ে এসেছিলেন। নারীরাও যে কোন অংশেই পুরুষদের থেকে কম নয় সেটি তিনি প্রমাণ করেছিলেন।

তবে অ্যামেলিয়ার ভাগ্য ততোটা সুপ্রসন্ন ছিল না। তিনি বিমান নিয়ে পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখতে চেয়েছিলেন। তার এই চাওয়াটাকে ভালোবেসে সাথে যোগ দিয়েছিলেন নাবিক বন্ধু নুনান।

বন্ধু নুনানের সাথে অ্যামেলিয়া এয়ারহার্ট।  ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

কিন্তু বিধিবাম! অ্যামিলিয়ার এই চাওয়াটাই তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৩৭ সালের ২রা জুলাই বন্ধু নুনান ও বিমানসহ পৃথিবী থেকে স্রেফ যেনো হারিয়ে যান। যাদের সন্ধান আজ পর্যন্ত মিলেনি।

১৯৩৭ সালের ২১ মে লকহিড ইলেক্ট্রো টেন ই বিমান নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে তারা পৃথিবী ভ্রমণে বের হন। ৪০ দিনে ২২,০০০ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে লায়ে নামক স্থানে এসে পৌঁছান তারা। তবে সমস্যার সূত্রপাত হয় ২ জুলাই থেকে।

একটি জাহাজ থেকে পাওয়া সিগন্যাল এর সাহায্যে হাউল্যান্ড দ্বীপের দিকে তারা এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই বিমানের সিগন্যাল অনেক জোরালো হয়ে আসলে জাহাজের রেডিও অপারেটর বিমানটি খুঁজতে বাইরে বেরিয়ে আসেন।

তবে আশ্চর্যের বিষয় তিনি আকাশে অ্যামেলিয়ার বিমানের কোন চিহ্নই খুঁজে পাননি। এমনকি তারা হাউল্যান্ড দ্বীপেও পৌছাননি। ব্যাপক অনুসন্ধানের পর অ্যামেলিয়া, নুনান কিংবা বিমানের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

যদিও তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি তবুও দুই সপ্তাহের অনুসন্ধান শেষে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে তাদের বিমানটি সাগরে বিধ্বস্ত হয়ে হারিয়ে গেছে ঘোষণা করা হয়।

   

ফারজানা জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

farjanazaman305@gmail.com.

Share if you like

Filter By Topic