শুরুর দিকের উপচেপড়া ভিড়ের কয়েকদিন পর থেকে স্বাভাবিকই ছিল ঢাকার মেট্রোরেলে যাত্রী সমাগম, তবে সরকারি ছুটির দিন আর বিশ্ব ইজতেমার কারণে পুরনো সেই চেহারা ফিরেছে দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক এ যানবাহনে।
অন্যান্য দিনের চেয়ে ছুটির দিনে ভিড় একটু বেশি হলেও শনিবার যাত্রীদের ঢল দেখা যায় আগারগাঁও স্টেশনে, চাপ সামলাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয় স্টেশনের মূল গেইট।
বেলা ১২টায় গেইট বন্ধের কথা থাকলেও ১৫ মিনিট আগেই তা বন্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিতণ্ডায়ও জড়ান যাত্রীদের কেউ কেউ, খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বলছেন, স্টেশনের ভেতরে প্রচুর যাত্রী অপেক্ষমান থাকায় চাপ সামলাতে আগেই গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শনিবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে আগারগাঁও স্টেশনে গেট বন্ধ করা নিয়ে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান ফাহমিদা নাঈম।
সেই পুলিশ কনস্টেবলকে তিনি প্রশ্ন করছিলেন- “গেট বন্ধ করার কথা ১২টায়। আপনারা পৌনে ১২টায় কেন গেট বন্ধ করেছেন?”
জবাবে ওই পুলিশ সদস্য বলেন, “উপরে (স্টেশনের ভেতরে) অতিরিক্ত যাত্রী অপেক্ষায় থাকায় আমাদেরকে মেইন গেইট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
জানতে চাইলে ফাহমিদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট্কমকে বলেন, “আমি উত্তরা থেকে সকাল ৯টায় এসেছি। শ্যমলী থেকে আমার কাজ সেরে উত্তরায় ফিরে যাওয়ার জন্য সময় মেনেই স্টেশনে উপস্থিত হয়েছি। গেট বন্ধ করার নির্ধারিত সময়ের আগে এসেও আমাকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।”
ফাহমিদার মতো একই সময়ে আরও প্রায় ১০০ যাত্রী স্টেশনে প্রবেশ করতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফিরে যান।
গত ডিসেম্বরে উদ্বোধনের পর সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত উত্তরা থেকে আগারগাঁও স্টেশনে মেট্রোরেল চলাচল করছিল। তবে গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানান, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত মেট্রোরেল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা যাত্রী পরিবহন করবে।
যাত্রীদের সুবিধায় সকাল ৮টায় স্টেশনের প্রবেশ গেট খুলে দেওয়া হবে। আর ১২টার সময় প্রবেশ গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু কনকোর্সে যেসব যাত্রী অপেক্ষমান থাকবেন তাদের সবাইকে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হবে। আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে মিরপুরের পল্লবী স্টেশন থেকেও মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহনের ঘোষণা দিতে ওই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল।
আগারগাঁও স্টেশনে সকালে দেখা যায়, ৮টার আগেই স্টেশনের বাইরে ভিড় করেন যাত্রীরা। সময় গড়ালে সেই সারি আরও লম্বা হতে থাকে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে মেট্রোরেলে ওঠেন যাত্রীরা।
নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত গেট খোলা না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আবু বকর সিদ্দিক নামের এক যাত্রী বলেন, মেট্রোরেলে চড়ে বিশ্ব ইজতেমায় যাওয়ার জন্য এসেছিলেন। তবে নির্ধারিত সময়ের আগে আসলেও তাকে স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
“স্টেশনের দায়িত্ব পালনকারীরা আমাদের জানাচ্ছেন, যাত্রী বেশি হওয়ায় উপরের নির্দেশে তারা গেট বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু আপনার সীমাবদ্ধতার জন্য আমি কেন কষ্ট পাব?”
জানতে চাইলে এমআরটি-৬ প্রকল্পের উপ প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন যাত্রীদের ভিড় লেগেই আছে। তবে সরকারি ছুটির দিনে ভিড় আরও বেশি হচ্ছে।
নির্ধারিত সময়ের আগে প্রবেশ গেট বন্ধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, “ভেতরে ভিড় বেশি হওয়ায় একটু আগেই গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সক্ষমতা বাড়িয়ে ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।”
এদিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও আসতে যাত্রীদের কোনো সমস্যা হয়নি। স্বল্প সময়ে আগারগাঁওয়ে আসতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন তারা।
উত্তরা থেকে মেট্রোরেলে আগারগাঁও স্টেশনে নেমে আব্দুল হালিম নামের একজন যাত্রী জানান, তিনি সপরিবারে মেট্রোরেলের ভ্রমণের স্বাদ নিতেই ছুটির দিনে বের হয়েছেন।
তার কথায়, “আমি থাকি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। সকাল ৮টার সময় আমার পরিবারের পাঁচজন মেট্রোরেল চড়ার জন্য আগারগাঁও স্টেশনে উপস্থিত হই। লাইন ধরে টিকেট কেটে উত্তরা স্টেশনে গিয়ে আবার ফিরতি টিকেট নিয়ে আগারগাঁও আসলাম।”
“আগে টেলিভিশনে বিদেশের মেট্রোরেল দেখেছি। এখন বাস্তবে মেট্রোরেলে চড়ার স্বাদ নিলাম”, বলেন তিনি।