ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় স্মৃতির সঙ্গে শোকের রক্তঝরা দিন একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
মহামারী পেরিয়ে মঙ্গলবার শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসে প্রভাতফেরির দিনটি ফিরছে সবার জন্য। দিবসের প্রথম প্রহর থেকে শুরু করে দিনমান শহীদ মিনার মুখরিত থাকবে মানুষের ভিড়ে।
তাই শহীদ মিনারের বেদী আর আঙ্গিনা ছাড়াও ওই এলাকায় দেয়ালের সঙ্গে পিচঢালা রাস্তাকেও বরাবরের মত ক্যানভাস বানানো হয়েছে। যেখানে ধরা হয়েছে ইতিহাস- মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষায় সংগ্রামের সেই ক্ষণ।
সোমবার শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাফসুতরোর কাজ সারা হয়েছে আগেই। এখন রঙিন আলপনায় ছেয়ে যাচ্ছে আঙ্গিনা। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
দেয়ালে দেয়ালে রঙ-তুলিতে বাঙময় বর্ণমালা। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের গৌরবগাথা, সংগ্রামের উত্তালের দিনগুলো। বাঙালি ও বাংলাকে উপজীব্য করে লেখা কবি-মনীষীর নানা পঙক্তি ও উক্তিও শোভা পাচ্ছে সেখানে।
প্রতিবারের মত এবারও সাজ-সজ্জার দায়িত্বটি পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের ওপর। তাতে যোগ দিয়েছেন সাবেকরাও।
শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী আফি আজাদ বান্টি বলেন, “আমরা চারুকলার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা মিলে এই কাজটা করে থাকি। যারা আমাদের মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, পিচঢালা রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করেছেন, তাদের জন্য এ কাজ করতে পারা আমাদের জন্য খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার।”
চারুকলার দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান শৈলী বলেন, “একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের গৌরব ও অহংকারের দিন। তাই লাল ইটের বেদী, ইটের দেয়াল কিংবা পিচঢালা রাস্তা- সবই হয়ে উঠেছে আমাদের ক্যানভাস। একুশের আবহে আমরা আলপনায় বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। “
গত দুই বছর মহামারীর প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন এবং ব্যক্তিপর্যায়ে সর্বোচ্চ দুজন একসাথে শ্রদ্ধা জানানো শর্ত ছিল।
এবার সেই বিধি-নিষেধ উঠে গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, “গত বছর আমরা নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যে অমর একুশ উদযাপন করেছি। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলছি, এবার যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সকলের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে তা উদযাপন করতে পারব।
“আমরা সকলের প্রতি অনুরোধ রাখব, যাতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করি। এটা সব সময়ই জরুরি একটি বিষয়। আমরা নিজেরা সুস্থ থাকি এবং অন্যদেরও সুস্থ রাখতে সহায়তা প্রদান করি। নিজস্ব উদ্যোগে সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি যেন আমরা পোষণ করি, সেই আহ্বান থাকবে।”
উপাচার্য বলেন, আলপনা আঁকা, দেয়াল লিখনসহ নানা ধরনের সাজসজ্জার কাজ চলছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নান্দনিক সাজসজ্জায় চারুকলার শিক্ষার্থীর কাজ করছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।
“পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গভীরভাবে তদারকি করছেন। একুশের প্রথম প্রহরে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমেই অমর একুশের কর্মসূচি শুরু হয়। সেজন্য সকল আয়োজন ও সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
পাশেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাদে ঘোষণা মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ প্রাঙ্গণে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কন্ট্রোল রুম, ফায়ার সার্ভিস ও প্রাথমিক চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় আচার অনুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষকবৃন্দ, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শ্রদ্ধা জানাবেন।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচল ও সব ধরনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এছাড়া এদিন সন্ধ্যা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাস বা আইডি কার্ড ছাড়া প্রবেশও নিষিদ্ধ থাকছে।
মঙ্গলবার শ্রদ্ধা জানাতে পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে যাবে শহরের সাধারণ মানুষ। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে ফিরতি পথ ধরতে হবে। তারপর দোয়েল চত্বর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রাস্তা দিয়ে চাঁনখার পুল হয়ে কেবল বের হওয়া যাবে।