Loading...
The Financial Express

দৃষ্টি অগোচরে থাকা বাংলাদেশের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান

| Updated: August 23, 2021 14:06:54


শাপলা বিল, সাতলা গ্রাম, উজিরপুর উপজেলা, বরিশাল শাপলা বিল, সাতলা গ্রাম, উজিরপুর উপজেলা, বরিশাল

কবি জীবনানন্দ দাশের ভাষায়, “বাংলার রূপ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর”। বাংলাদেশের প্রতিটি বাঁকেই রয়েছে নজরকাড়া মনোমুগ্ধকর সব স্থান। সেগুলোর মধ্যে কিছু স্থান সবার কাছে পরিচিত হলেও অনেকগুলোই এখনও মানুষের কাছে সেভাবে পরিচিতি পায়নি। অথচ দৃষ্টি অগোচরে থাকা ঐসব স্থানগুলোর মনোমুগ্ধকর রূপ আকৃষ্ট করতে সক্ষম ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের। তেমনই কিছু স্থান সম্পর্কে নিয়ে আজকের এ লেখায় আলাপ হবে।

গজনী, শেরপুর

ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত শেরপুর জেলা অবস্থির এই স্থানটি। ছোট ছোট টিলা আর চারপাশে দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ মন কাড়বে যেকোনো ভ্রমণপিপাসুর। এছাড়া সেখানে অবস্থিত আকাশচুম্বী সাইট ভিউ টাওয়ারে উঠে পর্যটকরা উপভোগ করতে পারবেন মনোরম গারো পাহাড়ের দৃশ্য। অন্যদিকে বিনোদনের জন্য সেখানে রয়েছে চিড়িয়াখানা, শিশুপার্কসহ বেশ কিছু ভাস্কর্য।

গজনী যেতে আপনাকে প্রথমেই আসতে হবে শেরপুর জেলায়। সেখান থেকে গজনী প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর মনোরম সেই গজনীতে যেতে আপনাকে ঝিনাইগাঠি উপজেলা পর্যন্ত বাসে যেতে হবে। বাকী ৮ কিলোমিটার জায়গা যেতে ধরতে হবে নতুন গাড়ি। আর এই ৮ কিলোমিটার পথ যেতে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা আর পাখির কলকাকলি আপনার যাত্রাপথকে আরো আনন্দময় করে তুলবে।

চালন্দা গিরিপথ, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চালন্দা গিরিপথের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রোমাঞ্চপ্রেমীদের জন্যও একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। পাহাড় এবং সবুজের হাতছানি দেওয়া এই স্থানের প্রত্যেকটি পদেই রয়েছে অন্যরকম এক শিহরণ। এখানে যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস পাওয়া যায়। এছাড়া নগরীর বটতলী রেলওয়ে স্টেশন থেকেও সরাসরি যেতে পারবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের পেছনে গেলে দেখতে পাবেন ঝর্ণা। আর সেই ঝর্ণা ধরে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন চালন্দা গিরিপথে। এ রাস্তায় আছে কখনো দু’টি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে হাঁটা, কখনোবা বুক সমান পানির মধ্য দিয়ে যাওয়া, আবার কখনো সবুজ অরণ্যের মধ্য দিয়ে হাঁটা। তবে এই স্থানটিতে যেতে হলে একা না গিয়ে ৫০-৬০ জনের একটি দল নিয়ে যাওয়াই ভালো। শীতকাল হচ্ছে পর্যটকদের জন্য চালন্দা গিরিপথে যাওয়ার সবচেয়ে আদর্শ সময়। কারণ এই সময় গন্তব্যপথে পানি কিছুটা কম থাকবে।

পারকি সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এবং গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত বাদ দিলে যে সৈকতটি ধীরে ধীরে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে, সেটি পারকি সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত এই স্থানটিতে গেলে প্রকৃতির মাঝে এক নতুন উচ্চতায় খুঁজে পাবেন নিজেকে। সেখানে আছে সমুদ্রের মন ভোলানো পানির শব্দ, সাথে সৈকত জুড়ে লাল কাঁকড়াদের অবাধ বিচরণ আর সৈকতের একপাশে ঝাউবাগান। সৈকতটিতে যেতে হলে আপনি চট্টগ্রামের যেকোনো জায়গা থেকেই সিএনজিচালিত বাহন ভাড়া করে যেতে পারবেন।

মুহুরি প্রজেক্ট, ফেনী

ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় অবস্থিত এই স্থানটিতে রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেঁচ প্রকল্প, দেশের প্রথম বায়ু-বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এবং দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন। মুহুরি নদী, ফেনী নদী, এবং কালিদাস পাহালিয়া নদী সম্মিলিত হয়ে যে প্রবাহ সৃষ্টি করে, সেটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই প্রজেক্ট। আর এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিমোহিত করে আসছে পর্যটকদের। পরিবার-পরিজন নিয়ে নৌ-ভ্রমণের জন্য একটি আদর্শ জায়গা হচ্ছে এই প্রজেক্ট। মুহুরি প্রজেক্ট যেতে আপনাকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লালপোলে নামতে হবে। সেখান থেকে সোনাগাজীগামী বাসে করে সোনাগাজী সদরে নামবেন। এরপর সেখান থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে পারবেন মুহুরি প্রজেক্টে।

চর কুকরি-মুকরি, ভোলা

বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানের মধ্যে চর কুকরি-মুকরি অন্যতম। এখানে আপনি পাবেন এক পাশে সমুদ্র, আরেক পাশে ম্যানগ্রোভ বনভূমির এক বিচিত্র সম্মিলন। বর্তমানে এই স্থানটিকে কেন্দ্র করে একটি সমৃদ্ধ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ভোলা জেলায় আপনি আরো পাবেন তারুয়া সমুদ্র সৈকত, মনপুরা দ্বীপসহ আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে ভোলা গিয়ে সহজেই উপভোগ করতে পারবেন এসব দর্শনীয় স্থানগুলো।

শাপলা বিল, বরিশাল

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার বিশাল সমারোহ দেখতে চাইলে যেতে পারেন বরিশালের শাপলা বিলে। এটি বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ২০০ একর জায়গা জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এই বিলটিতে রয়েছে অসংখ্য শাপলা ফুলের সমারোহ। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এখানে পর্যটকদের আগমন বেশি ঘটে। এই সময় বিলে শাপলা ফুল অন্য সময়ের চেয়ে বেশি ফোটে। এখানে আসতে হলে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে বরিশাল। সেখান থেকে বাসে করে শিকারপুর আসার পর অটো ভাড়া করে পৌঁছে যেতে পারবেন সাতলা গ্রামে অবস্থিত শাপলা বিলে।

অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বাংলাদেশের রূপ যুগ যুগ ধরে মুগ্ধ করে আসছে মানুষকে। তাছাড়া বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে খুব সহজেই এখন যে কোনো জায়গায় যাতায়াত করা যায়। অন্যদিকে প্রত্যেক জেলা শহরেই রয়েছে মানুষদের থাকার জন্য হোটেলসহ বিভিন্ন আবাসন ব্যবস্থা। তাই আশা করা যায় আগামীতে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প সবার কাছে আরো বেশি পরিচিতি পাবে, যা দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য খুবই মঙ্গলজনক।

তানজিম হাসান পাটোয়ারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন।

tanjimhasan001@gmail.com

Share if you like

Filter By Topic