বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আয়োজনের জন্য মাওলানা সা’দ কান্ধলভির অনুসারীরা মাঠ বুঝে নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা গাজীপুরের জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে ময়দান বুঝিয়ে দিয়ে ইজতেমাস্থল ত্যাগ করেন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, “ইজতেমার প্রথম পর্বের আয়োজক জুবায়েরপন্থিদের কাছ থেকে সকাল ১১টার দিকে ইজতেমাস্থল বুঝে নিয়েছেন সা’দপন্থি মুরুব্বিরা।”
“আমরা দেখেছি ময়দানের প্যান্ডেল, বিদ্যুৎ সংযোগসহ ব্যবহার্য সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি-না। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আয়োজকদের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সেসব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, “আশা করছি, সবার সহযোগিতায় ইজতেমার প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।“
আগে এক মঞ্চ থেকেই একবারই বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন হতো। কিন্তু মাওলানা জোবায়ের এবং মাওলানা সা’দ পক্ষের অনুসারীরা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে দুই পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুইবারে করার সিদ্ধান্ত নেয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
করোনাভাইরাসের প্রকোপের আগে দুই বছর দুই ভাগে বিশ্ব ইজতেমা করেছে দুই পক্ষ। মাঝখানে মহামারীর কারণে দুই বছর ইজতেমার কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
এবার মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা প্রথম পর্বে ১৩-১৫ জানুয়ারি ইজতেমা পরিচালনা করেছেন। মাওলানা সা’দ পক্ষের অনুসারীরা ২০-২২ জানুয়ারি ইজতেমা পরিচালনা করবেন।
মাঠ বুঝে নেওয়ার পর সা’দপন্থি তাবলিগ পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. মিজান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ইজতেমা মাঠ বুঝে নিয়েছি। বুধবার থেকে আমাদের তাবলিগ সাথীরা মাঠে জমায়েত হতে থাকবেন। এর আগেই পুরো মাঠ গুছিয়ে নেওয়া হবে ইনশাল্লাহ।”
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে মিজান বলেন, “সবার সহযোগিতায় সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে ইজতেমা সম্পন্ন হবে। এজন্য সব প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ময়দানের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। প্রশাসনও সার্বিক সহযোগিতা করছে।“
ফলে ‘অপপ্রচারে’ কান না দিতে অনুরোধ করেছেন সা’দপন্থি এই মুরুব্বি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, মাঠ পরিষ্কার করতে সিটি করপোরেশনের সার্বক্ষণিক গার্বেজ ট্রাকসহ প্রায় ৬০০ পরিচ্ছন্নকর্মী মোতায়েন রয়েছে। ইজতেমা ময়দানের দক্ষিণ পাশে তুরাগ নদীর তীরে বর্জ্য ফেলার জন্য অস্থায়ীভাবে ড্যাম্পিং পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্লিসিং পাউডারসহ অন্যান্য উপকরণ মজুত রয়েছে। এ পর্বেও আয়োজকদের প্রস্তুতিকাজে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে প্রথম পর্বে যে ব্যবস্থা ছিল একই ব্যবস্থা থাকবে। শুক্রবার থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা এবং তা চলবে রোববার পর্যন্ত। বৃহস্পতি থেকে সোমবার পর্যন্ত আমাদের বাহিনী থাকবে।
মাঠ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব আব্দুল হান্নান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবির, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম সাইফুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মামুনুল করিম, গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. ইব্রাহিম উস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া জুবায়েরপন্থি মুরুব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ, মিডিয়া সমন্বয়কারী জহির ইবনে মুসলিম এবং সাদপন্থি মুরুব্বী প্রকৌশলী শাহ মো. মহিবুল্লাহ, প্রকৌশলী মো. নূর মোহাম্মদ, ড. মো. আব্দুস সালাম, ড. রেজাউল করিম, হাজী মনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।