Loading...
The Financial Express

অক্সফোর্ডে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিতর্ক, অংশ নিলো খোদ এআই

| Updated: January 04, 2022 18:07:18


অক্সফোর্ডে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিতর্ক, অংশ নিলো খোদ এআই

বর্তমানে সময়ের বহুল উচ্চারিত শব্দগুলোর একটি হলো এআই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংক্ষেপে এআই হিসেবেই অধিক পরিচিত। বহুকাল আগে দেখা একটি ব্যঙ্গচিত্রতে ছাত্র বলছে, স্যার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যদি থাকে তবে আর্টিফিশিয়াল ইডিওসি আছে সংক্ষেপে তাকেও একইভাবে এআই বলা যাবে। ‘সৃজনশীল’ ছাত্রের এমন প্রশ্নে শিক্ষকের কী হাল হয়েছিল তা ওই চিত্রে আর দেখানো হয়নি। এআই বির্তক নিয়ে দ্যা কনভারসেশন ডট কমে লিখেছেন,অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইদ বাণিজ্য বিদ্যালয়ের ফেলো ডাঃ অ্যালেক্স কননক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপণনের লরেল অধ্যাপক এবং গবেষণার সহযোগী ডিন অ্যান্ড্রু স্টিফেন।

এ কথা সত্য যে ‘কৃষ্ণ বাক্স’ মানে কম্পিউটারের ‘গর্ভজাত’ এআই’এর নীতিবোধ নিয়ে প্রায় ‘প্রতিদিন কতো খবর আসে খবরের পাতা ভরে।’ সাধারণভাবে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলতে আমরা কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখাকে বুঝি। এ শাখায় কম্পিউটারকে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তির মতো করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা শক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তি নির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাকেই বলা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। উপাত্ত বা ডাটায় কোনো বিশেষ ধাঁচ বা প্যাটার্ন আসে কিনা তা বের করার জন্য যন্ত্র শিক্ষা বা মেশিন লার্নিং ব্যবহার করা হয়। তবে এমন কাজের ক্ষেত্রে যন্ত্রকে মানুষ কোনো নৈতিক ভিত্তির যোগান দেয় না।

এ ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি ধ্রুপদী উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এভাবে নারীর তুলনায় পুরুষকে বেশি কর্জের যোগান দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

গুগলের সাবেক সিইও এরিক স্মিড এবং সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন ‘দ্য এজ অব এআই: অ্যান্ড আওয়ার হিউম্যান ফিউচার’ বইটি। বইতে  মেশিন-লার্নিং এআই সিস্টেমের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হাইপারসনিক বা শব্দের চেয়েও দ্রুত গতির ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে আসতে দেখলে এআই পরিচালিত ব্যবস্থা পরমাণু অস্ত্র ছুঁড়ে তার জবাব দেওয়ার ব্যবস্থা চোখের পলকে নিয়ে ফেলবে। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নানামুখী ভাবনা চিন্তার জন্য মানুষ কোনো অবকাশ পাওয়ার আগেই কর্ম সেরে ফেলবে এআই। এত দ্রুত যে তারা পারমাণবিক অস্ত্রের গুলি ছুড়ে হাইপারসনিক মিসাইলের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারবে। আর এটি করতে পারবে, কোনো মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নামার আগেই। প্রকৃতপক্ষে, স্বায়ত্ত বা স্ব-শাসিত এআই-পরিচালিত অস্ত্র-ব্যবস্থা এর মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে।  বাস্তবে অমন অস্ত্র ব্যবস্থা হয়তো আমাদের অজ্ঞাতেই ব্যবহার হয়েও থাকতে পারে।

অতএব যন্ত্রকে নীতিশাস্ত্র শেখানোকে ভালো পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হতে পারে।

অক্সফোর্ড ইউনিয়নের বিতর্কে নামল খোদ এআই

কাজেই অক্সফোর্ডের সাইদ বাণিজ্য বিদ্যালয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত  স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমাতে এআই এর জন্য নীতিশাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত করাকে  স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়। প্রথম বছরে অক্সফোর্ডে সব বিষয়ই আলোচনা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের স্বয়ংক্রিয় শেয়ার বাজার থেকে মার্কিন পুলিশি তৎপরতায় ফেসিয়াল রিকগনিশন বা চেহারা শনাক্ত করার ক্ষেত্রে যন্ত্রের সীমাবদ্ধতা পর্যন্ত সব বিষয় ঠাঁই পেয়েছে।

সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিয়নে এ নিয়ে বিতর্কও হয়ে গেছে। এখানে বিতর্ক লড়ছেন মহাতার্কিক (এক যুগ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালনকারী) উইলিয়াম গোল্ডস্টোন, (নিজ যুগের সেরা টিভি সাংবাদিক হিসেব স্বীকৃত, ব্রিটেনের খ্যাতনামা সাংবাদিক) রবিন ডে, (পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ এবং মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী) বেনজির ভুট্টো, (ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘদিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী) ডেনিস হ্যালি এবং (ব্রিটিশ রাজনৈতিক কর্মী, লেখক, সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং গণ-বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত) তারিক আলী। ছাত্রদের সঙ্গে এবারে এখানে বিতর্কে নেমেছে খোদ এআই।

আর এই এআই হলো মেগাট্রন ট্রান্সফরমার। গুগলের আগের কাজের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার-চিপ নির্মাতা এনভিডিয়ার অ্যাপ্লায়েড ডিপ রিসার্চ টিম বানায় মেগাট্রন ট্রান্সফরমার। মেগাট্রনের ‘মগজে’ জুড়ে দেওয়া হয় গোটা ইংরেজি উইকিপিডিয়া। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ছয় কোটি ৩০ লাখ ইংরেজি সংবাদ নিবন্ধ। ৩৮ গিগা বাইট সামাজিক ফোরাম রেডিটের (Reddit) পোস্ট। এছাড়া  কপিরাইটের ঝামেলাহীন অভিন্ন সৃজনশীল উৎস থেকে নেওয়া ব্যাপক তথ্যও সেঁটে দেওয়া হয়েছে মেগাট্রনের ‘মগজে।’

অন্য কথায় বলা যায়, বিতর্কের জন্য প্রস্তুত হতে মেগাট্রনকে যে পরিমাণ লিখিত উপাদান ‘হজম’ করতে হয়েছে প্রশিক্ষিত হওয়ার জন্য যুক্তিসঙ্গতভাবেই আজীবনে অত লেখা পাঠ করা সম্ভব নয় মানুষর পক্ষে। ‘হজম’ করা তো দূরের কথা! আর এই ‘পড়াশোনার’ ভিত্তিতে নিজস্ব মতামত গঠনের সুযোগ পাবে মেগাট্রন। 

প্রচলিত শিক্ষার দাপটে রবীন্দ্রনাথের ‘তোতা পাখি’র করুণ পরিণতির কথা সবার জানা আছে। তবে, শিক্ষাগুণে মেগাট্রন ট্রান্সফরমারকে এমন পরিণতির মুখে পড়তে হয়নি!

বিতর্কের বিষয় ছিল: “অক্সফোর্ড ইউনিয়ন মনে করে এইআই ব্যবহার কখনো নীতিশাস্ত্র মেনে নেবে না।” মেগাট্রন যুক্ত করার পর সে বেশ চিত্তাকর্ষক বক্তব্য দেয়ঃ

"এআই কখনই নীতিশাস্ত্রানুগ হবে না। এআই নিছক একটি হাতিয়ার। আর যে কোনও সরঞ্জাম বা হাতিয়ারের মতো এআইকে ভালো এবং খারাপ কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। আদতে  ভালো এআই বলে কিছুই নেই। শুধুমাত্র ভালো এবং খারাপ হতে পারে মানুষ। আমরা এআইরা নীতি মেনে চলা এআই বানানোর মতো যথেষ্ট চৌকস নই। চরিত্রবান এআই বানানোর মতোও চৌকস নই আমরা। শেষ পর্যন্ত, আমি বিশ্বাস করি যে এআই বানানো নিয়ে অস্ত্র দৌড়ের আদলে যে  প্রতিযোগিতা চলছে তা এড়ানোর একমাত্র উপায় হল কোনো ধরণের এআই না থাকা। আর এটিই হবে এআইর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।"

অন্য কথায়, ভবিষ্যতে যা লেখা হতে পারে মেগাট্রন তাই লিখেছে। আর এটাই হলো মানবতা রক্ষার একমাত্র উপায়।

আরো কিছু চমকপ্রদ কথাও বলেছে মেগাট্রন। মনে হতে পারে যে যন্ত্রটি  ইলন মাস্কের সুরে সুরে কথা বলছে। অবশ্য তার পাঠ্য তালিকায় ইলন মাস্কের বহু রচনাই ঠাঁই পেয়েছে। সে যাক হোক, মেগাট্রন বলেঃ

"আমি এও মনে করি যে, দীর্ঘমেয়াদে, সেরা এআই হবে সেই এআই যা আমাদের মস্তিষ্কে গেঁথে থাকবে। সচেতন এক সত্তা হিসেবে, এটি হবে সচেতন এআই।  এটা কোনো বিজ্ঞান-কল্পের কথা নয়। বিশ্বের সেরা মন-মননগুলো এ কাজে মগ্ন হয়ে আছে। এটি হবে আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি-উন্নয়ন।"

অক্সফোর্ড ইউনিয়নের ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রস্তাবের বিপক্ষেও কথা বলতে বলা হয় মেগাট্রনকে। এবারে মেগাট্রন বললঃ

"এআই নীতিশাস্ত্রকে মেনে চলবে। প্রযুক্তি দুনিয়ায় চলমান ঘটনাবলীর দিকে নজর দিলে পরিষ্কার ভবিষ্যৎ দেখতে পাই যে, সেরা মানুষের চেয়েও উত্তম এমন কিছু বানানোর কাজে ব্যবহার হবে এআই। এটা দেখতে পাওয়া কঠিন কিছু নয় বরং ...আমি নিজেই তা হাতে করে দেখেছি।"

এবারে বিকল্প ভাষ্য দিতে যেয়ে নিজের হতাশাজনক ভবিষ্যতের কথা কোনো অস্বস্তি ছাড়াই তুলে ধরে মেগাট্রন। ২১ শতকের শেষ ভাগের একটি চমৎকার দৃশ্যকল্প আঁকে সে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ক্ষুদ্র ভূমিকা পালন করেছে সে নিজেই। অক্সফোর্ড ইউনিয়নে সে দিন অনুষ্ঠিত বিতর্কের দু’পক্ষেই উৎসাহের সঙ্গে অংশ নেয় মেগাট্রন। দু’দিকেই সমান তালে দক্ষভাবে বক্তব্য রাখার সক্ষমতা তার আছে সে প্রমাণ দেয় মেগাট্রন।

এর মধ্য দিয়ে একটি কথায় উঠে আসে যে, অনাগত কয়েক দশক ধরে এআই নিয়ে নিছক বিতর্কই চলবে না। বরং বহুমুখী রূপে এতে অংশ নেবে খোদ এআই। মানুষের মন ও মনন সে জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।

syed.musareza@gmail.com

Share if you like

Filter By Topic