বিশ্বের সবচেয়ে ধনী কিছু ভিক্ষুক


শবনম জাবীন জেবা | Published: August 28, 2022 16:25:03 | Updated: August 28, 2022 19:43:36


বিশ্বের সবচেয়ে ধনী কিছু ভিক্ষুক

একজন ভিক্ষুক অন্যের কাছে হাত পেতে অর্থ সাহায্য নিয়ে কোনো রকম মানবেতর জীবনযাপন করে। একটা ঝুপড়ি ঘরে কখনো একবেলা বা দুবেলা কোনোরকম দুমুঠো খেয়ে জীবন পার করে দেয় - ভিক্ষুক বলতে এমন চিত্র চোখের সামনে ভেসে উঠাটাই স্বাভাবিক। তবে জীবনের সব ক্ষেত্রেই বৈচিত্র আর কিছু ব্যতিক্রম থাকে।

বিশ্বে এমন কিছু ভিক্ষুক আছে যারা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনে এতটা অর্থ উপার্জন করেছে যে ভিক্ষুকএই শব্দের অর্থটার সাথে টাকার অংক মেলাতে গেলে রীতিমত চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে। এদের কারো কারো আবার বেশ কয়েকটা ফ্ল্যাটও রয়েছে। তাহলে এই মানুষগুলোকে চোখ বুঝে ধনী ভিক্ষুক বলা যেতেই পারে, তাই নয় কি?

এইশা

তিনি সৌদি আরবের একজন বাসিন্দা ছিলেন। তিনি প্রায় ১০০ বছর বেঁচে ছিলেন। আর এর মধ্যে জীবনের অর্ধেক মানে প্রায় ৫০ বছর ভিক্ষাবৃত্তি করে কাটিয়েছিলেন। তিনি মানুষের দয়া গ্রহণ করেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন। তবে মজার বিষয় হচ্ছে তার জীবদ্দশায় বেশিরভাগ মানুষ এমনকি তার প্রতিবেশীরাও তার উপার্জিত বিপুল অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে জানতেন না।

এইশার মৃত্যুর পর তার এক ঘনিষ্ঠ ছোটবেলার বন্ধু উপার্জিত বিপুল সম্পদের কথা সকলকে জানায়। তার উপার্জিত মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০ লক্ষ ইউএস ডলারের কাছাকাছি। এর মধ্যে চারটা দালানও রয়েছে। তার মৃত্যুর পর এই দালানগুলো প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তিনি তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন এবং তার মা ও বোন মারা যাওয়ার পরে উত্তরাধিকার সূত্রে তাদের সম্পত্তিরও মালিক হয়ে যান।

তারা প্রচুর অর্থ সাহায্য পেতেন বিশেষত কিছু মানবহিতৈষী মানুষ যথাসাধ্য সাহায্য প্রদান করতেন। তবে সবচেয়ে বেশি সাহায্য পেতেন ঈদের সময় করে।

এইশার ঐ চারটি বাড়িতে যেসব মানুষ পরিবার নিয়ে থাকতেন, তিনি কখনো তাদের কাছে ভাড়া চাইতেন না। একদম বিনামূল্যে থাকতে দিতেন। আজকালকার দিনে মানুষ এমনও হয়!

তার সেই ছোটবেলার বন্ধু তাকে অনেকবার এই পেশা ছেড়ে দিতে বলেছিলেন, কারণ এইশার তো তখন প্রচুর সঞ্চয় ছিল। কিন্তু এইশা কখনো রাজী হতেন না, বলতেন সামনের কঠিন সময়ের জন্য আমাকে আরো কাজ করতে হবে।

ভারত জেইন

নাম দেখলেই অনেকটা আন্দাজ করা যায় যে উনি একজন ভারতীয়।

ফোবর্সের জরিপ অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় যেমন মুকেশ আম্বানির নাম আছে, ঠিক তেমনি শীর্ষ ধনী ভিক্ষুকের তালিকায় নাম রয়েছে এই ভারত জেইনের।

ভিক্ষাবৃত্তি করে তার প্রতিদিনের উপার্জিত অর্থের পরিমাণ নেহায়েত কম নয়, যা একজন মধ্যম আয়ের ভারতীয় নাগরিকের দৈনিক গড় আয়ের প্রায় তিনগুণ।

তিনি প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ভিক্ষাবৃত্তি করেন এবং দৈনিক আয় প্রায় ২৫০০ ইন্ডিয়ান রুপি(বাংলাদেশি টাকায় যা ৩,০০০ টাকার কাছাকাছি)।

মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দান বা ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসে বসে তিনি মানুষের কাছে অর্থ সাহায্য প্রার্থনা করেন।

প্যাটেল নগরে ৪৫০ থেকে ৬০০ স্কয়ার ফিটের তার দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে যার প্রত্যেকটির বাজারমূল্য ৮০ লক্ষ ইন্ডিয়ান রুপি (বাংলাদেশি টাকায় যা ৯৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি)। ভান্দুপে তার একটি কমার্শিয়াল স্পেস নেয়া আছে, যেখানে তিনি একটি জুস শপের দোকান ভাড়া দিয়েছেন এবং ঐ জুস শপের মালিক তাকে প্রতি মাসে ১০,০০০ ইন্ডিয়ান রুপি (বাংলাদেশি টাকায় যা ১২,০০০ টাকার কাছাকাছি) করে ঘর ভাড়া দিয়ে থাকে।

সিমন রাইট

বছরে ৫০,০০০ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় যা ৫৫,৮৪,৮২৩ টাকার কাছাকাছি) উপার্জনকারী এবং ৩,০০,০০০ পাউন্ড বাজারমূল্যের একটি ফ্ল্যাটে বসবাসকারী একজন ব্যক্তি যদি হাতে গৃহহীন ও ক্ষুধার্ত লেখা একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসে ভিক্ষাবৃত্তি করে, তাহলে ব্যাপারটা কেমন লাগে! একজন ধনী ব্যক্তির কি এভাবে ভিক্ষা করা উচিত?

তিনি লন্ডনের ফাটনি হাই ষ্ট্রীটে অবস্থিত ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকের আশেপাশে বসে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। ভিক্ষা করার সময় তিনি জরাজীর্ণ পোশাক পরে আসতেন এবং ঐ প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসে থাকতেন।

বিষয়টি একসময় প্রশাসনের নজরে আসে এবং তার উপর বৃটিশ অ্যান্টি সোশ্যাল বিহেভিয়ার অর্ডার জারি করা হয়, এর ফলে তিনি লন্ডনের আর কোনো জায়গাতেই ভিক্ষাবৃত্তি করতে পারবেন না।

কিন্তু মিস্টার রাইট ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের এই আদেশ অমান্য করে আবারো একই কাজ শুরু করলে তাকে পাঁচ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।

শবনম জাবীন চৌধুরী ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।

zabin860@gmail.com

Share if you like