গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি আর কেন দেব, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর


এফই অনলাইন ডেস্ক | Published: February 05, 2023 14:41:19 | Updated: February 05, 2023 18:25:07


নবনির্মিত ‘বিনিয়োগ ভবন’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ইংল্যান্ড বিদ্যুতের দাম দেড়শ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশেও আর এ খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নবনির্মিত বিনিয়োগ ভবন এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নিয়ে তার এ মন্তব্য আসে বলে জানিয়েছে বাসস।

বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বিপুল পরিমান ভর্তুকি দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।

ইংল্যান্ড দেড়শ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এটা সবার মনে রাখতে হবে। আমরা কিন্তু সেই পর্যায়ে যাইনি। গ্যাস-বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে ক্রয়মূল্যে। আর কত ভর্তুকি দেওয়া যায়। আর এ ক্ষেত্রে কেন দেব। আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি কৃষিতে, খাদ্য উৎপাদনে।

এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১২ টাকা খরচ হয় জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, সেখানে আমরা নিচ্ছি মাত্র ৬ টাকা। তাতেই আমরা অনেক চিৎকার শুনি। গ্যাস-বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া যাবে যদি সবাই ক্রয়মূল্য যা হবে, সেটা দিতে রাজি থাকে। তাহলে দেওয়া যাবে। তাছাড়া আর কত ভর্তুকি দেয়া যায়।

মহামারীর ধাক্কা সামলে উঠতে সরকার যে বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছিল, আর তাতেই যে অর্থনীতির গতি সচল রয়েছে, সে কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্যই ছিল প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার। আমরা পৌঁছে দিয়েছি। জেনারেটরের ওপর যে ট্যাক্স ছিল, সেই ট্যাক্স আমি প্রত্যাহার করে নিয়েছি। শিল্প-কলকারখানায় যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে।

উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে শেখ হাসিনা খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে, বিশেষ করে সারাদেশে গড়ে ওঠা ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিনিয়োগ করলে তাতে বিনিয়োগকারী যেমন লাভবান হবেন, দেশেরও লাভ হবে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নবনির্মিত এই বিনিয়োগ ভবনে বিডার পাশাপাশি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) কার্যালয় হবে।

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৪ বছরে আপনাদের ব্যবাসায়ীবান্ধব পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি। শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা ব্যবসা করেন, এখন আর ওই হাওয়া ভবনের পাওয়াও দিতে হয় না। কোনো কিছুই করতে হয় না, সেই পরিবেশ আমরা তৈরি করে দিয়েছি।

আর আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য একদম তৃণমূলের মানুষ। তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে, আমাদের নিজস্ব বাজারহচ্ছে, ভৌগলিক অবস্থানেরকারণে আমাদের আশপাশের যে দেশগুলো রয়েছে, তাদের সঙ্গেও আমরাযোগাযোগ স্থাপন করছি।

বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধা কাজে লাগাতে ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভুটান, নেপাল, ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার সর্বক্ষেত্রেইচমৎকার একটিযোগাযোগের জায়গা। তাছাড়া এই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের বাজার, এই সুবিধাটা যে কেউ নিতে পারেন।

আমরা কক্সবাজারে অন্তর্জাতিক মানের এয়ারপোর্ট করে দিচ্ছি, ঢাকার সঙ্গে সরাসরি রেললাইন করা হয়েছে, আমরা সড়কের উন্নয়ন করেছি। সেক্ষেত্রে আমার মনেহয় যে ইস্ট এবং ওয়েস্টের মধ্যে একটা ব্রিজহতে পার বাংলাদেশ। সেভাবেই আমরা বাংলাদেশকেগড়ে তুলছি। আমরা মনে করি, আমাদের ভৌগলিক যে অবস্থান, সেটাও অত্যন্ত অনুকূলে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়িতে ইতোমধ্যে ডিপ সি পোর্টের কার্যক্রম শুরু করেছে, পায়রা পোর্টের উন্নতি হচ্ছে, মোংলা পোর্টের উন্নয়ন করা হচ্ছে। বে টার্মিনালসহ আরো অনেক সুবিধা সরকার করে দিচ্ছে।

আমি এটুকু বলব, সবাই বিনিয়োগ করুন। এতে নিজেরাও লাভবান হবেন আবার আমার দেশটাও লাভবান হবে। আমাদের রপ্তানি বাস্কেট বাড়াতে হবে। কিছু নতুন পণ্য এবং বাজার আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। সেটাই হচ্ছে সবথেকে বড় কথা। কাজেই দেশি বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের দেশ আরো উন্নত হোক, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা চাই বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হবে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করে দিয়েছি এবং তারই ভিত্তিতে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও আমরা করে যাচ্ছি।

এখানেই আমরা থেমে না থেকে ২১০০ সালেরবাংলাদেশ কেমন হবে সেজন্য ডেল্টা পরিকল্পনাও প্রণয়ন করে দিয়েছি। কাজেই বাংলাদেশের এই অগগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে সেটাই আমরা আশা করি। কাজেই আমাদের যারা ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত, আমি তাদের বলব, আপনারা আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করবেন, যাতে এই বাংলাদেশটাকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

শুধু সোনার বাংলাদেশই নয়, বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে আমাদের জনগোষ্ঠী হবে স্মার্ট, অর্থনীতি হবে স্মার্ট, ব্যবসা-বাণিজ্য হবে স্মার্ট- সবই আমরা ডিজিটাল সিস্টেমে করব।

পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। কারও সহযোগিতা বা সমর্থন পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু সমর্থন আমার জনগণ দিয়েছে। ফলে আমরা সফলতার সঙ্গে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করেছি।


প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Share if you like