ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বিচারে ২০২২ সালে বিশ্বে গণতন্ত্রের দশায় খুব বেশি পরিবর্তন না এলেও বাংলাদেশের অবস্থান এগিয়েছে দুই ধাপ।
পাঁচটি মানদণ্ডে একটি দেশের গণতন্ত্র পরিস্থিতি বিচার করে ইআইইউ শুক্রবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে ২০২২ সালে ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে ৭৩ নম্বরে।
২০২১ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৭ টি দেশের মধ্যে ৭৫ নম্বরে। সেবার বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৯৯।
এবারও ১০ এর মধ্যে একই স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ৭৩ নম্বরে উঠে এসেছে। আগের মতো এবারও মিশ্র শাসনেরশ্রেণিতেই রয়েছে বাংলাদেশ। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
২০২০ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫টি দেশের মধ্যে ৭৬ নম্বরে। সেবার বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৯৯। আর ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৮৮; অবস্থান ছিল ৮০ নম্বরে।
নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারে সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার- এই পাঁচ মানদণ্ডে একটি দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১০ ভিত্তিক এই সূচক তৈরি করে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।
সব সূচক মিলিয়ে কোনো দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে সেই দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
স্কোর ৬ থেকে ৮ এর মধ্যে হলে সেখানে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৪ থেকে ৬ এর মধ্যে হলে মিশ্র শাসন এবং ৪ এর নিচে হলে সে দেশে স্বৈরশাসনচলছে বলে ধরা হয়।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০০৬ সালে যখন প্রথম এই সূচক প্রকাশ করে, তখন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে তা এক ধাক্কায় ৫ দশমিক ৫২ পয়েন্টে নেমে যায়।
তারপর থেকে স্কোর বাড়লেও এখনও বাংলাদেশকে হাইব্রিড রেজিম বা মিশ্র শাসনের শ্রেণিতেই রেখেছে ইআইইউ।
সব সূচক মিলিয়ে কোনো দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে সেই দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
স্কোর ৬ থেকে ৮ এর মধ্যে হলে সেখানে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৪ থেকে ৬ এর মধ্যে হলে মিশ্র শাসন এবং ৪ এর নিচে হলে সে দেশে স্বৈরশাসনচলছে বলে ধরা হয়।
এই সূচকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থান এবার যথাক্রমে ৪৬ ও ৬০। ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাও রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের শ্রেণিতে। বাংলাদেশের সঙ্গে একই শ্রেণিতে রয়েছে নেপাল (১০১) ও পাকিস্তান (১০৭)
তালিকায় শীর্ষ পাঁচটি দেশ হল- নরওয়ে (স্কোর ৯.৮১ ), নিউ জিল্যান্ড (৯.৬১), আইসল্যান্ড (৯.৫২), সুইডেন (৯.৩৯) ও ফিনল্যান্ড (৯.২৯)। অর্থাৎ এই দেশগুলোর নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক সুবিধা ভোগ করে।
আর তালিকার সবচেয়ে নিচে থাকা দেশগুলো হচ্ছে- আফগানিস্তান (০.৩২), মিয়ানমার (০.৭৪), উত্তর কোরিয়া (১.০৮), সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (১.৩৫) এবং সিরিয়া (১.৪৩)। অর্থাৎ এই দেশগুলোর নাগরিকরা গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে প্রায় পুরোপুরি বঞ্চিত।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালে তাদের ভাষায় পূর্ণ গণতন্ত্র ছিল ২৪টি দেশে, যা আগের বছরের চেয়ে তিনটি বেশি।
ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্ররয়েছে এমন দেশের সংখ্যা আগের বছর থেকে পাঁচটি কমে ৪৮টি হয়েছে। আর মিশ্র শাসনে আছে এমন দেশ ৩৪টি থেকে বেড়ে ৩৬টি হয়েছে।
তাদের বিচারে বর্তমান বিশ্বে ৫৯টি দেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীনে রয়েছে; এই সংখ্যা আগের বছরের সমান।
এই সচূকে পুরো বিশ্বের স্কোর এবার ৫.২৯, যা আগের বছর ৫.২৮ ছিল। অর্থাৎ, বিশ্বের গণতন্ত্রের দশায় তেমন কোনো নড়চড় ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট দেখছে না।